দোহার(ঢাকা)প্রতিনিধি: ঢাকার দোহার উপজেলার সুতারপড়ার খালপাড় গ্রামের সোনা মিয়া গাজীর বাড়িতে দোহার থানা পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরিবারের সকলকে মারপিট করে এবং তিন জনকে আটক করে। এ ঘটনায় দোহার থানার তৎকালীন ওসি মোস্তফা কামাল, দোহার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উদয় চোকদার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন ওরফে মিজানুর রহমানকে দায়ী করে শুক্রবার(৮ নভেম্বর) বিকেল ৩ টায় সংবাদ সম্মেলন করে ওই পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোনা মিয়া গাজীর বড় ছেলে সিরাজ গাজী। তিনি অভিযোগ করেন, দোহার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেনের নির্দেশে সেদিন থানা পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীরা প্রবাসী এই পরিবারের উপর নির্যাতন চালায়। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।
তিনি আরও জানান, সেদিন ওসির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ওরফে সোনা মিয়া গাজী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর কয়েকদিন পর তার পিতা মারা যায়। তারা দুই ভাই ফ্রান্স প্রবাসী সিরাজ গাজী ও মিরাজ গাজীকে আটকের পর পুলিশ শাবল দিয়ে আঘাত করে এবং লাঠিপেটা করে। এসময় মিরাজের পা ভেঙ্গে দেয়। তারা দুজনই প্রায় এক মাস কারাগারে ছিলেন। তিনি এখনো অসুস্থ। সিরাজ গাজী বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দোহার থানার সেই অত্যাচারী ওসি মোস্তফা কামাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচার দাবী করেন এবং নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবেন বলেও জানান। সংবাদ সম্মেলনে সিরাজ গাজী ও মিরাজ গাজী ছাড়াও আশপাশের প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলো।
কে এই ওসি মোস্তফা কামাল?
মোস্তফা কামালের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে। তার বাবা হাইস্কুল শিক্ষক আবু জাফর মিয়া (চান মিয়া) বর্তমানে অবসরে আছেন। আবু জাফর মিয়ার তিন ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে মোস্তফা কামাল দ্বিতীয়। বড় ভাই জামাল তেমন কিছু করেন না।
ছোট ভাই উপজেলায় ছোটখাটো ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে জড়িত। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এরই মধ্যে মোস্তফা কামাল ২০০০ সালে এসআই হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে রাতারাতি পাল্টে যায় পারিবারিক অবস্থান।
সাভার থানার সেকেন্ড অফিসার ও আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নামে-বেনামে মুকসুদপুর, ঢাকা, সাভার ও আশুলিয়ায় গড়ে তোলেন অঢেল সম্পত্তি। এলাকায় তিনি কোটিপতি পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভার চণ্ডীবর্দী এলাকার গ্রামে ওসি মোস্তফা কামালের কোটি টাকার আলিশান বাড়ি এলাকার সবার নজর কেড়েছে। রাতারাতি তার এ উত্থান নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা। উপজেলার মানুষের মনে তার আয় নিয়ে নানা প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা রয়েছে। গোপালগঞ্জের নাম ভাঙিয়ে চলা এ পুলিশ কর্মকর্তার অনিয়মের বিরুদ্ধে ।
২০১৬ সালের ১৪ জুলাই নবাবগঞ্জ থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের পর দুই বছর পর পাশের থানায় দোহারে ওসি হিসেবে যোগ দিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে টি আইবির উপাধি পাওয়া বাস্তবের দোহারের খলনায়ক কটা আলমগীরের সাথে তাল মিলিয়ে তিনি অবৈধ অর্থ উপার্জনে ও আইনী শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে দোহার থানার সাবেক ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলায় তাদেরকে আটক করা হয়। যা হয়েছে তা উপরের নির্দেশেই।আমি শুধু আইনী দায়িত্ব পালন করেছি।