বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গনে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সাবেক গ্রাম্য সহকারী পশু চিকিৎসক ফিরোজ আলমের সাথে খামারীদের দেনা-পাওনা নিয়ে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে এঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চত্তর এলাকায় কিছুক্ষণের জন্য আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদ পেয়ে দোহার থানা পুলিশের টহল টিম অভিযুক্ত ফিরোজ আলমকে উদ্ধার করে থানায় হেফাজতে আনেন। পরে রাতে খামারীদের পাওনা টাকা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শামীম আহমেদের নিকট দুই লক্ষ পাচঁ হাজার টাকা ফেরৎদানে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের আওতায়, ডেইরি উন্নয়ন ও পোল্ট্রি খামারী (এলডিডিপি) প্রকল্পের আওতায় খামারিদের সহায়তা প্রদান করা হয়। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সাত শতাধিক পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারির নিয়ে সমিতি নিবন্ধনের মাধ্যমে সুপারভাইজারের নিকট দুগ্ধ গরু-বাছুর ও সিএনজি এবং অটোরিক্সা খামার ভেদে বিতরণ করা হয়।
বিতরণকৃত এসব প্রকল্পে বিতরণের নামে লাখ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পশু চিকিৎসক ফিরোজ আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমীন আক্তারের বিরুদ্ধে। ফিরোজ আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমীন আক্তার উপজেলার রামনাথপুর মুরগী পালন সমিতি’র সুপারভাইজারের দায়িত্বে ছিলেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শামীম আহম্মেদ বলেন, রামনাথপুর মুরগী পালন সমিতি’র নামে এলডিডিপি’র আওতায় একটি নতুন সিএনজি অনুদান হিসেবে খামারীর সদস্যের বিতরণ করা হয়। উক্ত সমিতির সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রায় দেড় বছরের বেশী সময় ধরে সিএনজি গাড়িটির জমাকৃত অর্থ প্রায় ২ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। পাশাপাশি গাড়িটিও তার কব্জায় রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ফিরোজকে তাগাদা দিলে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে বিলাশপুর অঞ্চলের কিছু ভাড়া করা লোক দাড় করিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম অভিযোগ জানিয়ে মানববন্ধন করেন।
এ সময়ে বিষয়টি টের পেলে রামনাথপুর মুরগী পালন সমিতি’র সদস্যরা উপজেলা পরিষদ এলাকায় জড়ো হয়। দু’পক্ষের বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে সমিতির সদস্যরা ফিরোজ আলমকে কিল-ঘুষি মারেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত ফিরোজ আলমকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসেন। পরে রাতেই আমার উপস্থিতিতে দুই লাখ পাচঁ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়ে মুচলেকায় মুক্তি পান।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এ রকম আরও সংঘবদ্ধ চক্র সুকৌশলে অনেক খামারিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের আশ্রয়ে এই চক্রগুলি রেজিস্ট্রেশন বিহীন কথিত ভেটেরিনারি ডাক্তার সেজে ও এলাকার প্রভাবশালীদের সহায়তায় এবং ফড়িয়ারা সরকারি সহায়তার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ফিরোজ আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শামীম হোসেনের নেতৃত্বে ভেটেনারী কার্যালয়ের সহকারী রহমান, স্বপন মোল্লা, টেকনেশিয়ান শাহদাৎ এবং খামারী জয়নাল বয়াতি, সুইটি আক্তার, আনোয়ার হোসেনসহ আরও বেশ কয়েকজন আমার উপর হামলা চালিয়ে কিল-ঘুষি মেরে নিলাফুলা জখম করেন।
অভিযুক্ত আর কারো সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলোরা জাহান বলেন, উপজেলা কার্যালয় প্রাঙ্গনে কোন অপ্রতিকর ঘটনা কেউ ঘটালে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে।